নিজের দেশ থেকে কত হাজার হাজার মাইল দুরে পরে আছি। কোনো মানে হয় না। যখন মন খারাপ হয়, যখন শরীর খারাপ লাগে তখনই মনে হয় যেখানে ছিলাম সেখানে ফিরে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মন ভাল হবে, শরীর ভাল হবে। একবার আমি খুউব শরীর খারাপের সময় প্রায় চলেই যাচ্ছিলাম। মন বলছিল বাড়িতে ফিরে গেলে সব ঠিক হবে। কেনো যে এ রকম মনে হয়! এখনও মনে হয় কোথাও যাই। দূরে কোথাও। বহু বহু দুরে। যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না। সেদিন একজনকে বলেছিলাম, ইচ্ছে করে পালাই। কিন্তু কোথায় পালাব, কার কাছে পালাব তাতো জানি না! যখন বরিশাল ছিলাম তখন সবসময় মনে হতো বরিশাল ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাব। কেনো এ রকম মনে হতো! স্কুলে পড়ার সময় আমি কয়েকবার বাড়ি থেকে দুরে দুরে চলে গেছিলাম। আজানা পৃথিবী আমাকে টানত, খুউব টানত। এখনও টানে। সেটা অন্য একরকম জগত। আমার জানা নাই। অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে জীবনে। যাক না। বরিশাল থেকে ঢাকা আসাটাই ছিল একটা অবাক করা ঘটনা আমার জন্য। তারপর একদিন প্রথম বিদেশ গেলাম, সেটা ছিল কলকাতা। কলকাতার রাস্তায় হাঁটতাম আর ভাবতাম এই আমি বিদেশে এসেছি! 

এরপর একদিন আমেরিকা আসলাম ঘুরতে। সেটাও ছিল বিস্ময়কর। তারপরতো কত দেশ বিদেশই না ঘোরা হলো। কিন্তু যখনই শরীর খরাপ লাগে, অসুস্থ্য হই তখনই মনে ভাবি এসব আমার কিছু না। আমি এসবের কেউ না। যার খুশী সে থাকুক বিদেশে আমার কি যায় আসে! আমি কেনো থাকতে যাব! আমার মনে হয় পৃথিবীতে সেই সবেচেয়ে দুৰ্ভাগা যে নিজের দেশে থাকে না। সেই সবচেয়ে ভাগ্যবান যে নিজের মাটিতে থাকে। জীবনান্দের ভাষায় বলতে হয়..

’ জীবন রবাবে টানিছে ক্ষিপ্ত ছড়ি! 

আদূরে আকাশে মধুমালতীর পাপড়ি পড়িছে ঝরি,- 

নিভিছে দিনের আলো,

-জীবন-মরণ দুয়ারে আমার, কারে যে বাসিব ভালো

একা একা তাই ভাবিয়া মরিছে মন! 

পূর্ণ হয়নি পিপাসী প্রাণের একটি আকিঞ্চন…

বাংলাদেশী কানাডিয়ান টরন্টোবাসী জসিম মল্লিক'র ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া।